প্রবন্ধ সূত্র : ভূমিকা – প্রাকৃতিক বিপর্যয় কি ?- পরিচিত কয়েকটি প্রাকৃতিক বিপর্যয় – বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা – ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা – উপসংহার
“প্রকৃতিকে অতিক্রম কিছু দূর পর্যন্ত সয়, তারপর আসে বিকাশের পালা ” |
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ভূমিকা :
দুর্যোগ বলতে আমরা বুঝি এমন একটি বিপদজনক অবস্থা বা বিপদের কারণ যার থেকে জীবনের ,সম্পত্তির এমনকি পরিবেশের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ৷ এই দুর্যোগ যখন দীর্ঘায়তা হওয়ার কারণে প্রাণহানি ও সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঝুঁকি থাকে, মানুষ বিপন্ন বোধ করে তখন বিপর্যয় পরিস্থিতি তৈরি হয় ৷
প্রাকৃতিক বিপর্যয় কি?:
প্রকৃতির তৈরি তাৎক্ষণিক বা দীর্ঘমেয়াদি এমন কোন বিপজ্জনক ঘটনা যা মানুষের দুর্গতির কারণ হয় এবং বাইরের সাহায্য ছাড়া যার মোকাবিলা করা যায়না তাকেই বলা হয় প্রাকৃতিক বিপর্যয় ৷ প্রাকৃতিক বিপর্যয় নানা ধরনের হয়-
- ১৷ জলবায়ু সংশ্লিষ্ট: ঝড়, সাইক্লোন, টর্নেডো ,হারিকেন ৷
- ২৷ জল সম্পর্কিত: বন্যা, জোয়ার, ভারী বৃষ্টি ,বর্জ্যপাত, খরা ৷
- ৩৷ ভূ সম্পরকিত: ভূমিকম্প, ভূমিক্ষয় ,ধস, আগ্নেয়গিরির লাভার স্রোত, হিমবাহ প্রভৃতি ৷
- ৪৷ অগ্নি সম্পর্কিত: দাবানল, অগ্নিকাণ্ড ৷
পরিচিত কয়েকটি প্রাকৃতিক বিপর্যয়:
- বন্যা: অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে নদী তার নিজের খাতে জল ধরে রাখতে না পারলে সেই জল যখন দু’কূল ছাপিয়ে লোকালয় ও কৃষি জমি প্লাবিত করে তখন তাকে বন্যা বলে ৷ আমাদের দেশে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শতকরা ৮০ ভাগ বৃষ্টি হয় ফলে ওই সময় দেশের নানা স্থানে বন্যা সৃষ্টি হয় ৷ঝাড়খন্ড অঞ্চলে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে গত ২০০০ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণবঙ্গে এক বিধংসী বন্যা হয়েছিল ৷
- ভূমিকম্প : পৃথিবীর ভূ-ত্বক হঠাৎ কেঁপে ওঠাকে ভূকম্প বলে ৷ এই কম্পনের মাত্রা প্রথমে মৃদু পরে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং একসময় কম্পনের মাত্রা কমে যায় ৷ এখনো পর্যন্ত ভূমিকম্পের কোনো আগাম সর্তকতা পাওয়া সম্ভব হয়নি ৷ তাই সাম্প্রতিককালে নেপালের ভূমিকম্প মানুষের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে৷
- ঘূর্ণিঝড়: ক্রান্তীয় ও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে উষ্ণ সমুদ্রের উপরের বাতাস প্রচন্ড উত্তাপে দ্রুতগতিতে উপরের দিকে উঠে যায় ৷ ফলে একটি নিম্নচাপ কেন্দ্র তৈরি হয়৷ তখন চারিদিকের শীতল বায়ু ওই নিম্নচাপ কেন্দ্রের ছুটে আসে ৷ ৫০ কিমি বা তার বেশি গতিবেগে প্রবল ঝড়ের সৃষ্টি হয় ৷ কয়েক বছর আগে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ‘আয়লা’ ঘূর্ণিঝড় দক্ষিণবঙ্গের কৃষিজমি , প্রাকৃতিক সম্পদ ও জনজীবনের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে ৷
বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা :
বিপর্যয় যেভাবে উন্নয়নকে বাঁধা দিচ্ছে তা চিন্তার বিষয় ৷ সে কারণেই উন্নয়ন প্রক্রিয়া সঙ্গে বিপর্যয়ের ঝুঁকি কমানোর কার্যকলাপ যুক্ত করার চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে ৷ বিপর্যয় ব্যবস্থাপনার মূল উদ্দেশ্য হলো বিপর্যয়ের মোকাবিলা করতে সক্ষম একটি জনগোষ্ঠী গড়ে তোলা ৷ মানুষকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে প্রধানত তিন ধরনের পরিস্থিতির মোকাবিলার পশিক্ষণ দিতে হবে –
- বিপর্যয় ঘটার আগের পরিস্থিতি,
- বিপর্যয় চলাকালীন পরিস্থিতি,
- বিপর্যয় পরবর্তী পরিস্থিতি ৷
ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা:
প্রাকৃতিক বিপর্যয় কখনো সময় মেনে আসে না, তাই ছাত্রছাত্রীরা নিজেরা যেমন নিজেদের সুরক্ষিত করতে প্রস্তুত থাকবে, তেমনি তাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে অনেক মানুষের জীবন বাঁচাতে সক্ষম হবে ৷ প্রাকৃতিক দুর্যোগ চলাকালীন এবং দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে ছাত্রছাত্রীরাই সাধারণ মানুষের পাশে এসে দাঁড়াবে ৷
উপসংহার:
প্রকৃতির খেয়াল এর কাছে মানুষ খেলনা স্বরূপ ৷ প্রকৃতির খেয়াল খুশি কাছে মানুষের ক্ষমতা নগণ্য ৷ কিন্তু আজ মানুষ প্রকৃতির ভৃত্যের মত আদেশ পালন করে না ৷ আবহাওয়া বিজ্ঞান যথেষ্ট উন্নত হওয়ার অনেক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে সৃষ্ট সম্ভাব্য ক্ষতি কমানো অনেকাংশে সম্ভব হয়েছে ৷ এর সঙ্গে মানুষের এমন কিছু ক্রিয়া-কলাপ যা প্রকৃতিকে রুষ্ট করেছে, তা অবিলম্বে বন্ধ করা দরকার ৷