[ রচনা – সংকেত : ভূমিকা, বৈচিত্র্যপূর্ণ রাজ্য ,পর্যটনে সম্ভাবনা , রাজ্যের অগ্রগতিতে পর্যটনশিল্প, সমস্যার নানান দিক, উপসংহার ]
ভূমিকা :
ভারত তার ভূবৈচিত্র এবং অতীত ঐতিহ্যের জন্য বিশ্বের পর্যটন – মানচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে রয়েছে ।বহিমালয় পর্বত, বঙ্গবসাগর ,আরবসাগর, ভারতমহাসাগর, মরু অঞ্চল, ব – দ্বীপ অঞ্চল, অভয়ারণ্য, প্রাচীন – স্থাপত্য শিল্পকলা, আধুনিক শহর, গ্রামীণ সভ্যতা, সমৃদ্ধ লোক সংস্কৃতি – সবই এই দেশে রয়েছে। আর এই বৈচিত্র্যপূর্ণ ভারতের এক ক্ষুদ্র সংস্করণ হলো আমাদের এই রাজ্য। তাই স্বাভাবিকভাবেই পর্যটন শিল্পের বিকাশের সমস্ত সম্ভাবনা এখানেও প্রবল।
বৈচিত্র্যপূর্ণ রাজ্য :
উত্তরে হিমালয় পর্বত ,বিস্তীর্ণ ডুয়ার্স অঞ্চল, প্রাচীন জনজাতি আর দক্ষিণে সমুদ্র ,বদ্বীপ অঞ্চল, ম্যানগ্রোভ অরণ্য । আবার পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চল, রাঢ় অঞ্চল, দক্ষিণবঙ্গের গাঙ্গেয় সমভূমি, ঐতিহাসিক স্মারক ,কলকাতা শহর মধ্যবঙ্গের গৌড় – পান্ডুয়া, মুর্শিদাবাদের ঐতিহাসিক স্থাপত্য, বোলপুরের শান্তিনিকেতন আশ্রম – এই সমস্ত নিয়েই অপরূপ বৈচিত্রে সজ্জিত আমাদের রাজ্য । পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ, মালদা, কাঁকড়াঝোড়, মুকুটমণিপুর, সুন্দরবন, সমগ্র উত্তরবঙ্গ, শান্তিনিকেতন ,দিঘা, বক্কেশ্বর, গঙ্গাসাগর, বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া, নবদ্বীপ প্রভৃতি স্থানগুলি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে সুবিখ্যাত । পর্যটনশিল্পে উন্নতির প্রায় সমস্ত শর্ত এখানে মজুত । প্রয়োজন শুধু সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে এই সম্ভাবনাকে বাস্তবায়িত করা ।
পর্যটনে সম্ভাবনা :
স্বাধীনতার পর থেকেই পর্যটনের ক্ষেত্রে এই রাজ্য ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে । সাম্প্রতিক কালে বহু বিদেশি পর্যটক রাজ্যে আসছেন। সরকারের পক্ষ থেকে নিত্যনতুন পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হচ্ছে । আয়োজিত হচ্ছে পর্যটন মেলা।’ ইকো- ট্যুরিজম’ এর ও প্রচার চলছে । নতুন নতুন স্থানে তৈরি হচ্ছে পর্যটক – আবাস । স্থানীয় মানুষ সেখানে কাজ পাচ্ছেন । সাংস্কৃতিক বিনিময় হচ্ছে এক জায়গার মানুষের সঙ্গে অন্য জায়গার মানুষের এককথায়, পর্যটনের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল ।
রাজ্যের অগ্রগতিতে পর্যটনশিল্প :
কৃষি, শিল্প, স্বাস্থ্য, শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে একটি রাজ্যের অগ্রগতিতে পর্যটনশিল্পের ভূমিকাও কম নয়। সঠিক পরিকল্পনা, উপযুক্ত পরিষেবার মাধ্যমে পর্যটকেরা আগ্রহী হন নতুন একটি জায়গা সম্পর্কে। রাস্তাঘাট ,পরিবহন ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ, ব্যবসা-বাণিজ্য – সমস্ত দিক থেকেই তখন সেই স্থানটির উন্নতি হয় । তা ছাড়া পর্যটনের মাধ্যমে ভাব বিনিময় , সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান। তা জাতীয় সংহতির ক্ষেত্রেও বিশেষভাবে সহায়ক।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাই পর্যটনশিল্পের ক্ষেত্রে উদ্যোগী হয়েছেন। রাজ্যের বাজেট পর্যটনের ক্ষেত্রে ২২৬ কোটি টাকা ধার্য করা হয়েছে। জলপাইগুড়ির গাজলডোবা, সুন্দরবনের ঝড়খালি প্রভৃতি জায়গায় ‘টুরিস্ট হাব’ গড়ে তোলা হয়েছে । পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতির চেষ্টা চলেছে। চালু হয়েছে হেলিকপ্টার পরিসেবা। জলপথে ভ্রমণের নতুন নতুন পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। সমুদ্রসৈকতগুলিতে নানারকম আকর্ষণীয় জলক্রিয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ‘অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস’ – কে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। আদিবাসী – অধ্যুষিত জেলাগুলিতে পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে । তাদের শিল্প-সংস্কৃতিকে তুলে ধরা হচ্ছে। তাদের তৈরি জিনিসপত্র জিনিসপত্র বিপণনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে । পুরাতত্ত্ববিভাগ, জিওলজিক্যাল সার্ভে, আদিবাসী উন্নয়ন পর্ষদ, শিল্পী ,ব্যবসায়ী সকলকেই পর্যটনের ক্ষেত্রে উদ্যোগ নেবার অনুরোধ জানানো হচ্ছে। উত্তরবঙ্গে গড়ে তোলা হচ্ছে নতুন নতুন বনবাংলো। অভয়ারণ্যেগুলিতেও পর্যটনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পর্যটন দফতরে হেল্প – ডেস্ক খোলা, বিজ্ঞাপন, ওয়েবসাইটের মাধ্যমে মানুষকে পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন সম্পর্কে জানাতে উদ্যোগী হচ্ছে সরকার।
সমস্যার নানান দিক :
রাজ্যের কিছু কিছু জায়গায় মাঝে মাঝে বিভিন্ন রাজনৈতিক কারণে পর্যটনশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পর্যটকরাও সেই সব জায়গা এড়িয়ে যেতে চাইছেন। পর্যটনশিল্পের পক্ষে এটি খুবই ক্ষতিকর। এ বিষয়ে সরকারকে আরও উদ্যোগী হতে হবে । পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে উপযুক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।
উপসংহার :
রাজ্যের বহু স্থানে নতুন নতুন পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে । সেগুলিকে নিয়ে দ্রুত সুষ্ঠু পরিকল্পনা করার ক্ষেত্রে এবং সরকারি উদ্যোগে আরও গতি আনা প্রয়োজন। সঙ্গে সঙ্গে আরও আকর্ষণীয় প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে । এতে শুধু এ রাজ্যের মানুষেই ভ্রমণে উৎসাহী হবেন না , ভিন রাজ্যের এবং ভিন দেশের পর্যটকরাও বাংলার অতিথি হতে উৎসাহী হবেন।