[ রচনা-সংকেত : ভূমিকা , বিজ্ঞানের জয়যাত্রা , আধুনিক জীবনে বিজ্ঞানের প্রভাব , বিজ্ঞানচেতনার প্রসার , উপসংহার ]
ভূমিকা :
বিজ্ঞান হল আধুনিক মানব সভ্যতা আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপ যার সাহায্যে অসম্ভবকে অনায়াসে সম্ভব করেছে মানুষ। বিজ্ঞানের ছটায় আলোকিত মানবসমাজ আদিমতার অন্ধকার থেকে প্রবেশ করেছে প্রগতি স্বাচ্ছন্দ্য আর যুক্তিশীলতার প্রশস্ত রাজপথে।
বিজ্ঞানের জয়যাত্রা :
অরণ্যচারী মানুষ বন কেটে বসত বানিয়েছে, গড়ে তুলেছে ইমারত- আর নাগরিক হয়ে ওঠার এই পর্বে মানুষের সঙ্গে থেকেছে বিজ্ঞান । বিজ্ঞান ব্যক্তিকজীবনকে সহজ ও স্বচ্ছন্দ করেছে, কৃষি- শিল্প -শিক্ষা থেকে চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান সীমাহীন । যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সুগম করে তুলেছে বিজ্ঞানই। বিজ্ঞান তাই মানবসভ্যতার সঙ্গে সমৃদ্ধি, স্বপ্ন আর সম্ভাবনার বিস্তৃত চালচিত্র।
আধুনিক জীবনে বিজ্ঞানের প্রভাব :
একুশ শতকের মানুষের ঘুম ভাঙ্গে এলার্মের শব্দে, ঘুমোতে যাওয়ার আগে সে টিভিতে দেখে নেয় ব্রেকিং নিউজ কিংবা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘুরে আসে বিশ্বের জ্ঞানসাম্রাজ্যে ।
তার খাদ্য ,পোশাক-পরিচ্ছদ থেকে বিনোদন- সবকিছুই আজ বিজ্ঞানের আশীর্বাদধন্য। মানুষের বিশ্বনাগরিক হওয়ার সাধনাকে সম্ভব করেছে বিজ্ঞান । ঘরের কোণের কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপ ,পামপট বা সাম্প্রতিকতম ট্যাবলেট বহু উদ্দেশ্যসাধনের মাধ্যমে যেন সভ্যতার নবজন্ম দিয়েছে । বিনোদনের দুনিয়ায় সংযোজিত হয়েছে নতুন মাত্রা।
গবেষণালব্ধ জ্ঞান ও আবিস্কার রোগ নির্ণয়ের নানা পদ্ধতি, ওষুধ ও শল্যচিকিৎসাতে যুগান্তর এনেছে। হৃদপিণ্ড বা মস্তিষ্কের শল্যচিকিৎসা থেকে কৃত্রিম অঙ্গ প্রতিস্থাপন- সবই এখন হাতের মুঠোয়। মৃত্যুকে জয় করা হয়তো সম্ভব হয়নি, কিন্তু বিজ্ঞানের সাহায্যেই আজ মানুষ পেয়েছে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করার সাহস। বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে শিক্ষার নানা উপকরণ। চক, ডাষ্টার, ব্ল্যাকবোর্ড এর পরিসর থেকে বেরিয়ে অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা তো বিজ্ঞানেরই অবদান। বইয়ের পাশাপাশি এখন নানান বিষয়ভিত্তিক সফটওয়্যার শিক্ষাকে সর্বস্তরে আকর্ষণীয় করে তুলছে। টেলিগ্রাফ, টেলিফোন থেকে মোবাইল ফোন, চিঠি লেখার বদলে ই-মেইল যোগাযোগের – অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটিয়েছে বিজ্ঞান । স্থলযান, জলযান এবং আকাশযানের উন্নতি ঘটেছে অভাবনীয়। কৃষিক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার উৎপাদান বাড়িয়েছে, খাদ্যের অভাব কমিয়েছে। উন্নতি কামী মানুষ কিন্তু এতেই সন্তুষ্ট নয়। সে রোবটের স্বপ্নে বিভোর, ক্লোনিং তাকে আলোড়িত করে, চাঁদে পাড়ি দেওয়ার আকাঙ্ক্ষায় সে অধীর হয়ে পড়ে।
বিজ্ঞানচেতনার প্রসার :
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিই আধুনিক সভ্যতার নিয়ন্ত্রক । কিন্তু এর অপব্যবহারে এর মানুষ যেন বিপর্যস্ত না হয়ে পড়ে । প্রগতির পথ যেন অন্ধবিশ্বাসে আচ্ছন্ন না হয়, কিংবা কোনভাবেই রক্তমাখা না হয় তা নিশ্চিত করা আবশ্যক । বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি থাকুক শুভ শক্তি হিসাবে, সভ্যতার ধাত্রী হিসেবে । ধ্বংসাত্মক ভূমিকাই তাকে আমরা দেখতে চাই না ।
উপসংহার :
আক্ষেপের বিষয়, আজকে পৃথিবীতে বিজ্ঞানের সুফল লাভ করেছে সমাজের অর্থবান মানুষেরাই । কিন্তু বিজ্ঞানের নানা সুফলকে দরিদ্রতম মানুষের কাছে পৌঁছে না দিতে পারলে তার লক্ষ্য পূরণ হবে না । বিজ্ঞানকে মানবকল্যাণের উদ্দেশ্যই ব্যবহার করতে হবে । আর তারই সহায়তায় মানুষ পৌঁছাবে এক নতুন পৃথিবীতে ।