Unseen Paragraph (অনুচ্ছেদ) – WBCS Mains Question Paper

WBCS Mains

Unseen Paragraph (অনুচ্ছেদ) Question Paper - 2021

অনুচ্ছেদটি পাঠ করে তার ভিত্তিতে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলোর উত্তর দিন : ১০ x ৪ = ৪০

বেলা দশটার মধ্যেই স্টিমার খুলনা ছেড়ে রওনা হল। এখন চলেছি মানুষের ঘরকন্নার সাথী ছবির মতো ছোটো নদী দিয়ে। দুই পাড়ে ধানক্ষেত। ধান কাটা শেষ হয়েছে। বাদামি রঙের ফাঁকা মাঠ, গোরু চরছে। মাঝে মাঝে চৌকো সরষেক্ষেত। একটু পর-পরই লোকালয়; খোড়ো ঘর, ঢেউ তোলা টিনের ঘর—আম, নারকেল, কলাগাছে ঘেরা। স্নানের ঘাটে লোকের ভিড়; পাড়ের উপর ছাগলছানা লাফাচ্ছে। কোথাও নদীর ধারে হাটের জায়গা; ছোটো ছোটো টিনের চালা, গোটাকয়েক টিনের বেড়ার ঘর। পাড়ের উপর দিয়ে লোক চলাচলের পথ; নানা বৈশের লোক চলেছে—কারও মাথায় ছাতি, কারও কাঁধে মোট।

আমাদের সারেং রহমত আলির নৌকা চাপা দেবার ভয় অত্যন্ত বেশি। বোধহয় কোনোদিন ও কাজ করে বিপদে পড়েছিল। কিন্তু খোঁড়ার পা-ই খানায় পড়ে। বেলা যখন দুটো, আর স্টিমার এসেছে কালিয়া গ্রামের কাছাকাছি, তখন স্টিমারের বাঁদিকের ফ্ল্যাটের সঙ্গে একখানা বড়ো পাট-বোঝাই নৌকার একটা মৃদু-রকম ঠোকাঠুকি হল। ফলে নৌকাখানি হল কিঞ্চিৎ জখম, তবে বেশি কিছু নয়। এরকম ঘটনা ঘটলে সারেংকে নিকটবর্তী পুলিশ-থানায় রিপোর্ট করতে হয়। স্টিমারের লোকজনদের মধ্যে অনেক জেলার লোক ছিল—চাটগাঁ, নোয়াখালি, কুমিল্লা, ঢাকা, ময়মনসিং। দেখলুম সকলে একমত যে, এ অঞ্চলের লোক বড়ো সহজ নয়, তিলকে তাল করে তোলার মতো কল্পনার দোর নাকি এদের প্রচুর আছে। সারেঙের ইচ্ছা, তার রিপোর্টটা ইংরেজিতে লেখা হয়। স্টিমারে চলনসই ইংরেজি লেখকের অভাব, সুতরাং ঘটনার রিপোর্টটা লিখে দিতে হল। কালিয়া স্টেশনে স্টিমার থামিয়ে স্টেশনমাস্টারবাবুকে সেই রিপোর্ট দেওয়া হল থানায় পাঠিয়ে দেবার জন্য। তাঁর মুখে শুনলুম, এখানে ইতিমধ্যেই রটে গিয়েছে যে, স্টিমার একখানা পাঁচ-শ-মনি বোঝাই নৌকা চাপা দিয়ে একেবারে ডুবিয়ে দিয়েছে।

(ক) ‘এখন চলেছি মানুষের ঘরকন্নার সাথী ছবির মতো ছোটো নদী দিয়ে।’— এই যাত্রাপথে লেখকের চোখে যে ছবি ধরা পড়েছিল তা আপনার নিজের ভাষায় লিখুন।
(খ) ‘এরকম ঘটনা ঘটলে সারেংকে নিকটবর্তী পুলিশ-থানায় রিপোর্ট পাঠাতে হয়।’— ‘এরকম ঘটনা’-টি কী? এই ঘটনার বর্ণনা দিন।
(গ) ‘ঘটনার রিপোর্টটা’ কাকে কেন লিখে দিতে হয়েছিল— লিখুন।
(ঘ) ‘খোঁড়ার পা-ই খানায় পড়ে’ এবং ‘তিলকে তাল করে তোলা’— এই বাক্যাংশ দুটির অর্থ এই অনুচ্ছেদের মধ্যে কীভাবে সত্য হয়ে উঠেছিল,— নিজের ভাষায় লিখুন।

Unseen Paragraph (অনুচ্ছেদ) Question Paper – 2020

অনুচ্ছেদটি পাঠ করে তার ভিত্তিতে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলোর উত্তর দিন : ১০ x ৪ = ৪০

কোনও কোনও বৈজ্ঞানিক নামের একটা মোহিনী শক্তি আছে, লোকে সেই নাম শিখিলে স্থানে অস্থানে প্রয়োগ করে । ‘গাটাপার্চা’ এইরকম একটি মুখরোচক শব্দ । ফাউন্টেন পেন, চিরুনি, চশমার ফ্রেম প্রভৃতি বহু বস্তুর উপাদানকে লোকে নির্বিচারে গাটাপার্চা বলে । গাটাপার্চা রবারের ন্যায় বৃক্ষবিশেষের নিষ্যন্দ । ইহাতে বৈদ্যুতিক তারের আবরণ হয়, জলরোধক বার্ণিশ হয়, ডাক্তারি চিকিৎসায় ইহার পাত ব্যবহৃত হয় । কিন্তু সাধারণত লোকে যাহাকে গাটাপার্চা বলে তাহা অন্য বস্তু ।

আজকাল যে সকল শৃঙ্গবৎ কৃত্রিম পদার্থ প্রস্তুত হইতেছে তাহার কথা সংক্ষেপে বলিতেছি — নাইট্রিক অ্যাসিড, তুলা ইত্যাদি হইতে সেলুলয়েড হয় । ইহা কাচতুল্য স্বচ্ছ, কিন্তু অন্য উপাদান যোগে রঞ্জিত, চিত্রিত বা হাতির দাঁতের ন্যায় সাদা করা যায় । ফটোগ্রাফের ফিল্ম, মোটর গাড়ির জানালা, হার্মোনিয়মের চাবি, পুতুল, চিরুনি, বোতাম প্রভৃতি অনেক জিনিসের উপাদান সেলুলয়েড । অনেক চশমার ফ্রেমও এই পদার্থ । রবারের সহিত গন্ধক মিলাইয়া ইবনাইট বা ভলকানাইট প্রস্তুত হয় । বাংলায় ইহাকে ‘কাচকড়া’ বলা হয় । যদিও কাচকড়ার মূল অর্থ কাছিমের খোলা । ইবনাইট স্বচ্ছ নয় । ইহা হইতে ফাউন্টেন পেন, চিরুনি প্রভৃতি প্রস্তুত হয় ।

আরও নানাজাতীয় স্বচ্ছ বা শৃঙ্গবৎ পদার্থ বিভিন্ন নামে বাজারে চলিতেছে, যথা — সেলোফোন, ভিসকোস, গ্যালালিথ ব্যাকেলাইট ইত্যাদি । এগুলির উপাদান ও প্রস্তুতপ্রণালী বিভিন্ন । নকল রেশম, নকল হাতির দাঁত, নানারকম বার্ণিশ, বোতাম, চিরুনি প্রভৃতি বহু শৌখিন জিনিস ওই সকল পদার্থ হইতে প্রস্তুত হয় ।

(ক) গাটাপার্চা কী ? এর উপকারিতা কোথায় কোথায় দেখা যায় ?
(খ) সেলুলয়েডের উৎস কী ? আমাদের জানা কোন্ কোন্ জিনিস সেলুলয়েড দিয়ে তৈরি হয় ?
(গ) ভলকানাইট কীভাবে তৈরি হয় ? এটি কিরকম পদার্থ ? এর বাংলা অর্থ পরিস্ফুট করো ।
(ঘ) বৈজ্ঞানিক নামের মোহিনী শক্তির অপপ্রয়োগে কী হয় ?

Unseen Paragraph (অনুচ্ছেদ) Question Paper– 2019

অনুচ্ছেদটি পাঠ করে তার ভিত্তিতে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দিন : 10 x 4=40

মরুভূমিতে ভীষণ ঝড় উঠলো, আমাদের হাঁটু পর্যন্ত বরফে ডুবে গেল । সে ঝড় আর থামবার নাম নেই, কুড়িদিন পর্যন্ত সমানভাবে চলে একদিন শেষরাএে আকাশ পরিষ্কার হল । পরদিন সকালটিতে অতি পরিষ্কার সূর্যোদয় দেখে আমরা ভাবলাম আর ভাবনা নেই, বিপদ কেটেছে । দুপুরের পর সামান্য একটু হাওয়া উঠলো । দশ মিনিটের মধ্যে আবার এমন ঝড় শুরু হল যে গত কুড়িদিনেও সে রকম উদ্দাম ও বরফপাত আমরা দেখিনি । উপরের দিকে চেয়ে দেখি আকাশ তখনও নীল, মেঘের লেশও কোথাও নেই, অথচ আমাদের তাঁবুতে তখন এমন অবস্থা যে পাঁচ হাত দূরের জিনিস দেখা যায় না, ঝড়ে চূর্ণ তুষার উড়িয়ে এনে চারিধার আচ্ছন্ন করে ফেলেছে ।

প্রায় মাইলটাক দূরে আমাদের উটগুলো চরছিলো । একজন লোক তখনি তাঁবু থেকে বেরিয়ে গিয়ে অতি কষ্টে সেগুলোকে তাঁবুতে নিয়ে এল, যদিও এধরনের বরফের ঝড়ের সময় ঘর ছেড়ে বাইরে বার হওয়া অত্যন্ত বিপদজনক, প্রাণ হারিয়ে গেলে শীতে মৃত্যু নিশ্চিত । আসবার সময় যে লোকটা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আসতে পারলে না, হাতে পায়ে হামাগুড়ি দিয়ে অতি কষ্টে তাঁবুতে পৌঁছালো, ঝড়ের এমন বেগ যে তার সামনে দাঁড়ানো যায় না । যখন সে তাঁবুতে এল তখন তার মুখে, বুকে গলায় বরফ কঠিন হয়ে জমে গিয়েছে । আমরা বরফের মধ্যে একটা গর্ত করে সেখানে উটগুলোকে রেখে দিলাম । দেখতে দেখতে ঝড় তাদের উপর হাত দুই পুরু বরফ চাপা দিলে, তবুও ভয়ানক শীতের হাত থেকে কথঞ্চিত পরিত্রান পেলে তারা । আমাদের তাঁবুর ডবল ক্যানভাসের ছাদ ফুঁড়ে বরফ এসে সূচের মত আমাদের নাকে মুখে বিঁধছিল আর সে কি ভয়ানক ঠাণ্ডা । সন্ধ্যার কিছু পরেই ঝড়টা যেমনি এসেছিল, তেমনি হঠাৎ থেমে গেল । নির্মল আকাশে জ্যোৎস্না উঠলো, চারিধারে কেমন একটা অদ্ভুত নিস্তব্ধতা । সাহস করে সে রাত্রে আমরা ঘুমোতে পারলাম না । সকালে উঠে দেখি যে তাঁবুতে বরফ জমে এমন অবস্থা হয়েছে যে সেটাকে গুটিয়ে নেবার উপায় নেই, অগত্যা সেই অবস্থাতেই সেটা উঠিয়ে উটের পিঠে চাপিয়ে রওনা হওয়া গেল ।

(ক) “আমরা ভাবলাম আর ভাবনা নেই, বিপদ কেটেছে ।”—এই বিপদের বর্ণনা দিন ।
(খ) লেখকের ভাবনার অবসান কি সত্যিই হল ? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দিন ।
(গ) উটগুলো বিপদ থেকে কীভাবে রক্ষা পেল ?
(ঘ) সন্ধ্যার পরে যা ঘটেছিল তা আপনার নিজের ভাষায় লিখুন ।

Unseen Paragraph (অনুচ্ছেদ) Question Paper– 2018

4. অনুচ্ছেদটি পাঠ করে তার ভিত্তিতে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দিন : 10×4=40

জন্তুর অবস্থাও যেমন, স্বভাবও তার অনুগত । তার বরাদ্দও যা, কামনাও তার পিছনে চলে বিনা বিদ্রোহে । তার যা পাওনা তার বেশি তার দাবি নেই । মানুষ বলে বসল, ‘আমি চাই উপরি-পাওনা ।’ বাঁধা বরাদ্দের সীমা আছে, উপরি-পাওনার সীমা নেই । মানুষের জীবিকা চলে বাঁধা বরাদ্দে, উপরি-পাওনা দিয়ে প্রকাশ পায় তার মহিমা ।
জীবন ধর্মরক্ষার চেষ্টাতেও মানুষের নিরন্তর একটা দ্বন্দ্ব আছে । সে হচ্ছে প্রাণের সঙ্গে অপ্রাণের স্বন্দ্ব । অপ্রাণ আদিম, অপ্রাণ বিরাট । তার কাছ থেকে রসদ সংগ্রহ করতে হয় প্রাণকে, মালমশলা নিয়ে গড়ে তুলতে হয় দেহযন্ত্র । সেই অপ্রাণ নিষ্ঠুর মহাজনের মতো, ধার দেয় কিন্তু কেবলই টানাটানি করে ফিরে নেবার জন্যে, প্রাণকে দেউলে করে দিয়ে মিলিয়ে দিতে চায় পঞ্চভূতে ।

এই প্রাণচেষ্টাতে মানুষের শুধু কেবল অপ্রাণের সঙ্গে প্রাণের দ্বন্দ্ব নয়, পরিমিতের সঙ্গে অপরিমিতের । বাঁচবার দিকেও তার উপরি-পাওনার দাবি । বড়ো করে বাঁচতে হবে, তার অন্ন যেমন-তেমন নয়, তার বসন, তার বাসস্থান কেবল কাজ চালাবার জন্যে নয়– বড়োকে প্রকাশ করবার জন্যে । এমন কিছুকে প্রকাশ, যাকে সে বলে থাকে ‘মানুষের প্রকাশ’ ,জীবনযাত্রাতেও যে প্রকাশে ন্যূনতা ঘটলে মানুষ লজ্জিত হয় । সেই তার বাড়তি ভাগের প্রকাশ নিয়ে মানুষের যেমন দুঃসাধ্য প্রয়াস এমন তার প্রয়োজন মেটাবার জন্যও নয় । মানুষের মধ্যে যিনি বড়ো আছেন, আহারে বিহারেও পাছে তাঁর অসম্মান হয় মানুষের এই এক বিষম ভাবনা ।

ঋজু হয়ে চলতে গিয়ে প্রতি মুহূর্তেই মানুষকে ভারাকর্ষণের বিরুদ্ধে মান বাঁচিয়ে চলতে হয় । পশুর মতো চলতে গেলে তা করতে হত না । মনুষ্যত্ব বাঁচিয়ে চলাতেও তার নিয়ত চেষ্টা, পদে পদেই নীচে পড়বার শঙ্কা । এই মনুষ্যত্ব বাঁচানোর দ্বন্দ্ব মানবধর্মের সঙ্গে পশুধর্মের দ্বন্দ্ব, অর্থাৎ আদর্শের সঙ্গে বাস্তবের ।

(ক) ‘জন্তুর অবস্থাও যেমন, স্বভাবও তার অনুগত’ বলতে লেখক কী বোঝাতে চেয়েছেন ?
(খ) ‘প্রাণের সঙ্গে অপ্রাণের দ্বন্দ্ব’ বিষয়টি কী ?
(গ) ‘মানুষের প্রকাশ’ বলতে কী বুঝিয়েছেন ?
(ঘ) মনুষ্যত্ব বাঁচানোর দ্বন্দ্বকে ‘আদর্শের সঙ্গে বাস্তবের’ দ্বন্দ্ব হিসাবে দেখা হল কেন ?

Unseen Paragraph (অনুচ্ছেদ) Question Paper– 2017

৪। অনুচ্ছেদটি পাঠ করে তার ভিত্তিতে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দিন । ৪০

আমরা বাইরের শাস্ত্র থেকে যে ধর্ম পাই, সে কখনোই আমার ধর্ম হয়ে ওঠে না । তার সঙ্গে কেবলমাত্র একটা অভ্যাসের যোগ জন্মে । ধর্মকে নিজের মধ্যে উদ্ভূত করে তোলাই মানুষের চিরজীবনের সাধনা । চরম বেদনায় তাকে জন্মদান করতে হয়, নাড়ির শোণিত দিয়ে তাকে প্রাণদান করতে হয়, তারপরে জীবনে সুখ পাই আর না পাই —আনন্দে চরিতার্থ হয়ে মরতে পারি । যা মুখে বলছি, যা লোকের মুখে শুনে প্রত্যহ আবৃত্তি করছি, তা যে আমার পক্ষে কতই মিথ্যা তা আমরা বুঝতেই পারিনে । এদিকে আমাদের জীবন ভিতরে ভিতরে নিজের সত্যের মন্দির প্রতিদিন একটি একটি ইট নিয়ে গড়ে তুলছে । জীবনের সমস্ত সুখ দুঃখকে যখন বিচ্ছিন্ন ক্ষনিকভাবে দেখি তখন আমাদের ভিতরকার এই অনন্ত সৃজনরহস্য ঠিক বুঝতে পারি নে —প্রত্যেকটা পদ বানান করে পড়তে হলে যেমন সমস্ত বাক্যটার অর্থ এবং ভাবের ঐক্য বোঝা যায় না সেই রকম । কিন্তু নিজের ভিতরকার এই সৃজন ব্যাপারের অখন্ড ঐক্যসূত্র যখন একবার অনুভব করা যায় তখন এই সর্জমান অনন্ত বিশ্বচরাচরের সঙ্গে নিজের যোগ উপলব্ধি করি, যেমন গ্রহ, নক্ষত্র, চন্দ্র, সূর্য জ্বলতে জ্বলতে ঘুরতে ঘুরতে চিরকাল ধরে তৈরি হয়ে উঠেছে আমার ভিতরেও তেমনি অনাদিকাল ধরে একটা সৃজন চলছে; আমার সুখ দুঃখ বাসনা বেদনা তার মধ্যে আপনার স্থান গ্রহণ করেছে । নিজের প্রবহমান জীবনকে যখন নিজের বাহিরে নিখিলের সঙ্গে যুক্ত করে দেখি তখন জীবনের সমস্ত দুঃখগুলিকেও একটা বৃহৎ আনন্দসূত্রের মধ্যে গ্রথিত দেখতে পাই । আমি আছি এবং আমার সঙ্গে সমস্তই আছে —আমাকে ছেড়ে কোথাও একটি অণু পরমাণুও থাকতে পারে না ; এই সুন্দর শরৎ প্রভাতের সঙ্গে, এই জ্যোতির্ময় শূন্যের সঙ্গে, আমার অন্তরাত্মার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তার যোগ —অনন্ত জগৎপ্রাণের সঙ্গে আমার এই যে চিরকালের নিগূঢ় সম্বন্ধ সেই সম্বন্ধেরই প্রত্যক্ষ ভাষা এই সমস্ত বর্ণ-গন্ধ গীত ।

(ক) ধর্ম সম্পর্কে লেখকের নিজস্ব ধারণা কী ?
(খ) কীভাবে বিশ্বচরাচরের সঙ্গে লেখক নিজের যোগ উপলব্ধি করেছেন ?
(গ) বিরাট ব্যাপার বলতে লেখক কী বুঝিয়েছেন ?
(ঘ) “এই সমস্ত বর্ণ-গন্ধ গীত” বলতে লেখক কী বোঝাতে চেয়েছেন ?

Unseen Paragraph (অনুচ্ছেদ) Question Paper– 2016

৪। নিম্নলিখিত অনুচ্ছেদটি পাঠ করে তা থেকে গৃহীত প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লিখুন । ৪০

কারও উঠোন চষে দেওয়া আমাদের ভাষায় চূড়ান্ত শাস্তি বলে গণ্য । কেন-না উঠোনে মানুষ সেই বৃহৎ সম্পদকে আপন করেছে, যেটাকে বলে ফাঁক । বাহিরে এই ফাঁক দুর্লভ নয়, কিন্তু সেই বাহিরের জিনিসকে ভিতরের করে আপনার করে না তুললে তাকে পেয়েও না পাওয়া হয় । উঠোনে ফাঁকটাকে মানুষ নিজের ঘরের জিনিস করে তোলে; ওইখানে সূর্যের আলো তার ঘরের আপনার আলো হয়ে দেখা দেয়, ওইখানে তার ঘরের ছেলে আকাশের চাঁদকে হাততালি দিয়ে ডাকে । কাজেই উঠোনকেও যদি বেকার না রেখে তাকে ফসলের ক্ষেত বানিয়ে তোলা যায়, তাহলে যে বিশ্ব মানুষের আপন ঘরে বিশ্ব, তারই বাসা ভেঙ্গে দেওয়া হয় ।

সত্যকার ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে প্রভেদ এই যে, ধনী এই ফাঁকটাকে বড়ো করে রাখতে পারে । যে সমস্ত জিনিসপত্র দিয়ে ধনী আপনার ঘর বোঝাই করে তার দাম খুব বেশি, কিন্তু যে ফাঁকটা দিয়ে তার আঙ্গিনা হয় প্রশস্ত, তার বাগান হয় বিস্তীর্ণ সেইটেই হচ্ছে সবচেয়ে দামী । সদাগরের দোকান ঘর জিনিসপত্রে ঠাসা, সখানে ফাঁক রাখবার শক্তি তার নেই । দোকানে সদাগর কৃপণ, সেখানে লক্ষপতি হয়েও হয়েও সে দরিদ্র । কিন্তু সেই সদাগরের বাসের বাড়িতে ঘরগুলো লম্বায় চওড়ায় উঁচুতে সকল দিকেই প্রয়োজনকে ধিকার করে ফাঁকটাকেই বেশি আদর দিয়েছে, আর বাগানের তো কথাই নেই । এইখানেই সদাগর ধনী ।

শুধু কেবল জায়গার ফাঁকা নয়, সময়ের ফাঁকাও বহুমূল্য । ধনী তার অনেক টাকা দিয়ে এই অবকাশ কিনতে পায় । তার ঐশ্বর্যের প্রধান লক্ষণ এই যে, লম্বা লম্বা সময় সে ফেলে রাখতে পারে । হঠাৎ কেউ তার সময়ের উঠোন চষতে পারে না । আর একটা ফাঁকা, যেটা সবচেয়ে দামী, সেটা হচ্ছে মনের ফাঁকা । যা-কিছু নিয়ে মন চিন্তা করতে বাধ্য হয়, কিছুতেই ছাড় পায় না, তাকেই বলে দুশ্চিন্তা । গরিবের চিন্তা, হতভাগার চিন্তা মনকে একেবারে আঁকড়ে থাকে, অশ্বথ গাছের শিকড়গুলো ভাঙ্গা মন্দিরকে যেরকম আঁকড়ে ধরে । দুঃখ জিনিসটা আমাদের চৈতন্যের ফাঁক বুজিয়ে দেয় । শরীরের সুস্থ অবস্থা তাকেই বলে যেটা হচ্ছে শারীরচৈতন্যের ফাঁকা ময়দান । কিন্তু হোক দেখি বা্ঁ পায়ের কড়ে আঙ্গুলের গাঁটের প্রান্তে বাতের বেদনা, অমনি শারীরচৈতন্যের ফাঁকা বুজে যায়, সমস্ত চৈতন্য ব্যথায় ভরে ওঠে । মন যে ফাঁকা চায়, দুঃখে সেই ফাঁকা পায় না । স্থানের ফাঁকা না পেলে যেমন ভালো করে বাঁচা যায় না, তেমনি সময়ের ফাঁকা, চিন্তার ফাঁকা না পেলে মন বড়ো করে ভাবতে পারে না ; সত্য তার কাছে ছোটো হয়ে যায় । সেই ছোটো সত্য মিটমিটে আলোর মতো ভয়কে প্রশ্রয় দেয়, দৃষ্টিকে প্রতারণা করে এবং মানুষের ব্যবহারের ক্ষেত্রকে সংকীর্ণ করে রাখে ।

(১) উঠোন চষে দেওয়াকে শাস্তি বলে গণ্য করা হয়েছে কেন ?
(২) সত্যকার ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে প্রভেদ কী ?
(৩) মনের ফাঁকা বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?
(৪) মন বড়ো করে ভাবতে না পারলে কী হয় ?

Unseen Paragraph (অনুচ্ছেদ) Question Paper– 2015

৪। অনুচ্ছেদটি পাঠ করে তা থেকে গৃহিত প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লিখুন । ৪০

আমি যে ভবিষ্যৎ বঙ্গদেশের কল্পনা করি, তাতে বর্তমানের মজানদীর এবং শুষ্ক খালের খাতে প্রচুর জলপ্রবাহের অশ্রান্ত কলধ্বনি শোনা যাচ্ছে । তাদের বক্ষের ক্ষীরধারায় সমস্ত দেশ ফলে ফুলে শস্যে অপূর্ব শ্রী ধারণ করেছে । আমি যে ভবিষ্যতের কল্পনা করি, তাতে বাংলার প্রত্যেক পল্লীতে এবং প্রত্যেক জনপদে তার নিজস্ব নদী অথবা খাল আছে, যাদের সাহায্যে উদ্বৃত্ত বর্ষার জল অবাধে সাগর পথে প্রবাহিত হচ্ছে, বর্তমানের মত সে জল ম্যালেরিয়ার মশার সূতিকাগারের সৃষ্টি করছে না । আমি যে ভবিষ্যতের কল্পনা করি, তাতে প্রত্যেক গৃহস্থের বাড়ি গৃহশিল্পের আলপনার সুন্দর এক একটি নিদর্শন হয়ে বিরাজ করছে । বর্তমানের মতো গৃহসৌন্দর্য পিপাসুর মনে নিত্য সে নতুন যন্ত্রণার কারণ হচ্ছে না । আমি যে ভবিষ্যতের কল্পনা করি, তাতে প্রত্যেক গ্রামের নিজস্ব বাগান, নিজস্ব খেলার মাঠ, নিজস্ব পাঠাগার, নিজস্ব ক্লাব বা ইনস্টিটিউট আছে । আর গ্রামবাসীরা সেই সব প্রতিষ্ঠান পরস্পর সহযোগিতায় নিত্য নতুন আনন্দের সন্ধান পাচ্ছে । আমি যে ভবিষ্যতের কল্পনা করি, তাতে প্রশস্ত সুগঠিত রাজপথ দেশের প্রত্যেকটি গ্রামের সঙ্গে প্রত্যেকটি গ্রামকে, প্রত্যেকটি নগরের সঙ্গে প্রত্যেকটি নগরকে সুলগ্ন রেখেছে । আমি যে ভবিষ্যতের কল্পনা করি, তাতে বাংলার গৃহপালিত পশুপক্ষীর শ্রী এবং সৌন্দর্য বাংলার গৌরবের বিষয় হযে দাঁড়িয়েছে । আমি যে ভবিষ্যতের কল্পনা করি, তাঁর মাংসপেশিবহুল, সুঠাম, বলিষ্ঠ দেহ বাঙালি বৈদেশিকের বিস্ময় উৎপাদন করছে । আমি যে ভবিষ্যতের কল্পনা করি, তাতে বাঙালি নারীর স্বাস্থ্য এবং সৌন্দর্য বিশ্ববাসীর প্রশংসার বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে । আমি যে ভবিষ্যতের কল্পনা করি, তাঁর বিদ্যানিকেতনগুলির স্থাপত্য-সৌন্দর্য, তাদের উদ্যানের শোভা, তাদের বেষ্টনীর মনোহারিত্ব মানুষের মনকে সৌন্দর্যের অপরূপ জগতের সন্ধান দিচ্ছে । আর সেই সব প্রতিষ্ঠানের আচার্য এবং ছাত্রদের পরস্পরের স্নেহ এবং প্রীতি নাগরিকদের আদর্শ হয়ে উঠেছে, তাদের সত্য-শ্রেয়ঃ-সুন্দরের সাধনা বিশ্বের অনুকরণীয় গৌরবের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে । আমি যে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছি, তাতে হিন্দু তার ধর্মের অন্তর্নিহিত সনাতন সত্যের সন্ধান পেয়েছে, মুসলমান তার ধর্মের অন্তর্নিহিত শাশ্বত সত্যের সন্ধান পেয়েছে, আর উভয়েই মর্মে মর্মে বুঝেছে যে, যেখানে সুন্দর সেখানে দ্বেষ-হিংসা নাই, যেখানে শ্রেয়ঃ সেখানে সংকীর্ণতা নাই, কার্পণ্য নাই, আলোকের পথে অন্তহীন একাগ্র অভিযানই সকলের ধর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে । আমি যে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখি, তার সাহিত্য থেকে ফাঁক, আড়ম্বর আর ভাবের দৈন্য চিরতরে বিদায় গ্রহণ করেছে । সত্য-শ্রেয়ঃ-সুন্দরের নিত্য নতুন অনুভূতিতে সে সাহিত্য নিত্য নতুন পথ রচনা করেছে । সে সাহিত্যের দৃষ্টি সম্ভাবনাহীন অতীতের দিকে নয়, দৃষ্টি তার সম্ভাবনাপূর্ণ ভবিষ্যতের দিকে ।

(১) ধর্ম নিয়ে লেখকের ভাবনা কী ?
(২) সত্য শ্রেয়ঃ-সুন্দরের সাধনা নিয়ে কোন স্বপ্ন লেখক গৌরবের বিষয় হবে বলে মনে করেন ?
(৩) আদর্শ গ্রাম বাংলার কল্পনার রূপটি লিখুন ।
(৪) বাঙালি নারী পুরুষের কোন চেহারা লেখকের পছন্দ ? সাহিত্য নিয়ে তাঁর বক্তব্য কী ?

Unseen Paragraph (অনুচ্ছেদ) Question Paper– 2014

৪। নিম্নোক্ত যে-কোনো একটি অনুচ্ছেদ পুঙ্খানুপুঙ্খ পাঠ করে তা থেকে গৃহীত প্রশ্নগুলির উত্তর লেখ ।

(ক) মানুষের আত্মবিশ্বাসই মানুষের উন্নতির একমাত্র পথ । সেই আত্মবিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে উদ্যম বা প্রচেষ্টার মাধ্যমে মানুষ নিজেকে উন্নতির পথে নিয়ে যেতে পারে । সততা, পরিশ্রম ও আত্মবিশ্বাসই মানুষকে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় । ঠিক এভাবেই, এভারেস্ট জয়ের পথে এগিয়ে গিয়েছিলেন তেনজিং নোরগে ও এডমন্ড হিলারির মতো মানুষ । এভারেস্ট জয়ের পথে প্রভূত বাধা, বিপদ, ঝড়ঝঞ্ঝা, মৃত্যুভয়ের নিশ্চিত হাতছানির কোনো কিছুই তাদের দমিয়ে রাখতে পারেনি । ঐকান্তিক পরিশ্রম, সততা ও আত্মবিশ্বাসের দ্বারাই তারা এভারেস্টের মতো শৃঙ্গ জয় করেছিলেন ।

(১) কিভাবে মানুষ উন্নতির লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে ? ২০
(২) এভারেস্ট কারা জয় করেছিলেন এবং কিভাবে ? ১০
(৩) কোন তিনটি শক্তি এক্ষেত্রে অমোঘ হয়ে উঠেছিল ? ১০

(খ) যুদ্ধ শব্দটি আমাদের মনে মৃত্যু ও ধ্বংসের একটি দৃশ্য উপস্থিত করে । যুদ্ধ জাতি গুলির মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি করে । এটি সভ্যতাকে হাজার বছর পেছনের দিকে পরিচালিত করে । এখন সারা বিশ্ব জুড়ে একটি ঠান্ডা লড়াই চলছে । যুদ্ধের বিপদ উপলব্ধি করে সমস্ত শান্তিপ্রিয় মানুষ গভীর ভাবে শান্তির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছেন । প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ অপরিমেয় মৃত্যু ও ধ্বংস নিয়ে এসেছিল । গত দশকে আমরা উপসাগরীয় যুদ্ধ এবং আমেরিকা আফগান যুদ্ধ দেখেছি । বিজ্ঞান মানুষকে ধ্বংসাত্মক অস্ত্রশস্ত্র দিয়েছে । একটি নতুন যুদ্ধ উল্লেখ করার মতো কিছুই অবশিষ্ট থাকে না । আধুনিক বিধ্বংসী অস্ত্র কুড়ি সেকেন্ডের মধ্যে বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে । এখন পরমাণু যুদ্ধের একটি আতঙ্ক বিশ্বের উপর ঝুলছে । বিশ্বে একটি অঘোষিত যুদ্ধ চলছে । UNO 1986 সালকে আন্তর্জাতিক শান্তিবর্ষ হিসাবে ঘোষণা করেছিল । শান্তির স্বপ্নকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে সমস্ত জাতির এগিয়ে আসা উচিত । ধ্বংস নয় প্রস্ফুটিত জীবনের স্বপ্নই আমাদের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত । সমৃদ্ধিশালী ও যুদ্ধ মুক্ত পৃথিবীর জন্যও শান্তি, ভ্রাতৃত্ব ও একাত্মতার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসই কাঙ্ক্ষিত ।

(১) ‘যুদ্ধ’ শব্দটি আমাদের চোখের সামনে কী ছবি তুলে ধরে ? ১৫
(২) যুদ্ধ কীভাবে দেশ, জাতি ও সভ্যতার ক্ষতি করে ? ১০
(৩) প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে কী হয়েছিল ? ১০
(৪) শান্তি কীভাবে আসা সম্ভব ? ৫

Read More

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *